Henna or Meehendi - হেনা ও মেহেন্দি

How To Apply Henna or Mehendi Without Side Effects

বিয়ে, উৎসব কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠানের মৌসুমে অনেকেই ঘন ঘন Henna Or Mehendi তথা হেনা বা মেহন্দি ব্যবহার করেন, তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মেহন্দি ব্যবহারের ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে, ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে চুলের প্রাকৃতিক প্রোটিন নষ্ট হয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে বা মাথার ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

আবার সংবেদনশীল ত্বকের মানুষেরা ত্বকের শুষ্কতা, ফোলাভাব বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন। যা ভবিষ্যতে জ্বালাভাব বা চর্মরোগের কারণ হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা সতর্ক করছেন। বাজারচলতি Henna বা মেহন্দির সঙ্গে মেশানো কেমিক্যালের কারণে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।

চিকিৎসকদের মতে, বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক মেহন্দি ব্যবহার করাই ভালো, যাতে কৃত্রিম রঞ্জক বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব এড়ানো যায়। অতএব, সৌন্দর্য বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যের দিকেও সচেতন হওয়া জরুরি। Henna বা মেহন্দির ব্যবহারের ইতিহাস ৫০০০ বছরেরও বেশি পুরনো, যার শিকড় প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

পাকিস্তান, ভারত, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, এবং যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষ করে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। শুধুমাত্র সৌন্দর্যচর্চার জন্যই নয়, ভেষজ গুণের কারণেও এটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে, মরুভূমির শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে এই ভেষজ উপাদান ব্যবহৃত হত। শরীরকে ঠান্ডা রাখতে মানুষ হাতের তালু, পায়ের তলা এবং মাথার চুল ভিজিয়ে রাখতেন বাটা Henna বা মেহন্দি পাতার প্রলেপ দিয়ে, যা আরামদায়ক অনুভূতি দিত।

শুধুমাত্র শীতলতা প্রদান করাই নয়, মেহন্দি চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি, Henna বা মেহন্দি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক রঞ্জক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে চুলের রং পরিবর্তন করতে এটি ছিল অন্যতম প্রধান ভেষজ উপাদান। এটি চুলকে লালচে-বাদামি রং দেয়, যা কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার ডাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

এছাড়া, মেহন্দির ব্যবহার শুধুমাত্র রং করার জন্যই সীমাবদ্ধ নয়, চুলের গঠন শক্তিশালী করতে, খুশকি কমাতে এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ও অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং মাথার ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয়, চুলের সার্বিক যত্নেও মেহন্দি ব্যবহারের প্রচলন হাজার বছর ধরে চলে আসছে।

দিল্লির “স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালের” বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ “ডা. রোহিত বাত্রা” ও “দিল্লির সরোজ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের” চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ “ডা. অনিল গঞ্জু” বলছেন জানিয়েছেন, ” প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন রোগী আসেন, যাঁদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে শুধুমাত্র হাতে মেহন্দি লাগানোর পর”। এলার্জি, চুলকানি, লালচে দাগ, এমনকি ত্বকের জ্বালাভাবের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমরা প্রায়ই লক্ষ করি।

প্রাকৃতিক শ্যাম্পু সত্যি কি চুলের সৌন্দর্যের চাবিকাঠি?

অনেকেই জানেন না যে, মেহন্দির অতিরিক্ত বা ভুল ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তিনি বিশেষভাবে রাসায়নিক মিশ্রিত মেহন্দি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন, কারণ এতে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম রঞ্জক ও সংরক্ষণকারী ও ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে, যেমন অ্যামোনিয়া, পিপিডি (প্যারা-ফেনাইলেনেডিয়ামিন) এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, যা ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

এমনকি সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে গুরুতর অ্যালার্জির কারণও হতে পারে আবার এটি দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে, বিশেষত যাঁরা আগে থেকেই ত্বক বা শ্বাসযন্ত্রজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাই তিনি সবাইকে শতভাগ বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক মেহন্দি ব্যবহারের পরামর্শ দেন এবং আগে থেকেই ত্বকের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যাতে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়।

Heat Wave India

চিকিৎসকদের মতে, চুলে Henna বা মেহন্দি লাগানোর কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, বিশেষত মেহন্দি ব্যবহারের সময় সতর্ক না হলে মেহন্দি যদি ভুলবশত চোখের সংস্পর্শে আসে তীব্র জ্বালা, লালচে ভাব এবং চোখে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি চোখের সংবেদনশীলতাও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

শুধু তাই নয়, হাতে লাগানো মেহন্দি যদি খাবারের সঙ্গে মুখে চলে যায়, তাহলে তা হজমের সমস্যা, পেটব্যথা কিংবা বমির মতো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তাই মেহন্দি ব্যবহারের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত মেহন্দি বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি না হয়।

অত্যাধিক গরমে তরতাজা থাকতে চান? তাহলে পাতে থাকুক এই ফল! ভিটামিনের ভান্ডার এই ফল খেলে গরমে আর চিন্তা নেই।

মেহন্দি ব্যবহারের আগে এবং পরে কীভাবে যত্ন নেবেন?

  • চুলে Henna বা মেহন্দি লাগানোর আগে অবশ্যই ভালো করে তেল মালিশ করুন, যাতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং মেহন্দির শুষ্কতার প্রভাব কমে যায়।
  • তেল লাগালে মেহন্দি চুলে অতিরিক্ত শুকিয়ে চুলের রুক্ষতা সৃষ্টি করতে পারে না।
  • Henna বা মেহন্দি ব্যবহারের পর শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে, যাতে অবশিষ্টাংশ চুলে জমে না থাকে এবং চুল নরম ও মসৃণ থাকে।
  • হাতে বা ত্বকে মেহন্দি লাগানোর আগে অবশ্যই একটি ‘প্যাচ টেস্ট’ করে নেওয়া উচিত, যাতে অ্যালার্জির আশঙ্কা থাকলে তা আগেভাগেই বোঝা যায়।
  • প্যাচ টেস্টের জন্য অল্প পরিমাণ মেহন্দি হাতে বা কনুইয়ের ভাঁজে লাগিয়ে অন্তত এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। যদি লালচে দাগ, চুলকানি বা জ্বালাভাব না হয়, তবে এটি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারেন।
  • যদি ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কোনও অবস্থাতেই নিজে থেকে ঘরোয়া টোটকা প্রয়োগ না করাই ভালো, কারণ ভুল প্রতিকারের কারণে ত্বকের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
  • প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *