Sundarban Honey Collection – গভীর জঙ্গলে বিপদের মুখ থেকে কি ভাবে মধু সংগ্রহ করা হয় জানুন।

সুন্দরবনের যারা ভূমিহীন অথবা নদীর ধারে বসবাস করেন সেই সব অঞ্চলের মানুষদের মূলত Sundarban Honey Collection বা মাছ ধরা, বনে গিয়ে কাঠ ভাঙা, নদীর বাগদা চিংড়ি ধরা,কাঁকড়া ধরা, এবং মধু সংগ্রহ করাই তাদের প্রধান জীবীকা। এমনকি অনেকের উল্লেখযোগ্য পেশাই হল এই মধু সংগ্রহ করা। মূলত যারা এই মধু সংগ্রহ করে তারা মৌলে নামে পরিচিত হয়। সাধারণত বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় এরা জঙ্গলে যায় এবং মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

Sundarban Honey Collection Process

এরা নিজেদের জীবনের কথা না ভেবে জঙ্গলে Sundarban Honey Collection বা মধু সংগ্রহ করতে যায় এবং এই মৌলে রা জানে জঙ্গল থেকে তারা জিবিত নাও ফিরতে পারে। কিন্তু তাও জীবন মায়া ত্যাগ করে তাদের জীবিকার তাগিদে জঙ্গলে যেতে হয়, ওই জঙ্গলে থাকা হিংস্র বাঘ, কুমির, বিষধর সাপেদের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাদের।

বছরের বেশিরভাগ সময়ে এদের জঙ্গলের উপর নির্ভর করে জীবন ও জীবিকা অতিবাহিত হয়। সমস্ত সুন্দরবন অঞ্চলটি মোট ১০৬টি দ্বীপ দ্বারা পরিপূর্ণ আছে, এর মধ্যে ৫২টি দ্বীপে মানুষ বসবাস করতে পারে না। এই ৫২টি দ্বীপের মধ্যে বন্য প্রানীরা নির্বিচারে ঘুরে বেড়ায়।

এই দ্বীপ গুলিতে বিভিন্ন প্রকার ম্যানগ্রোভ জঙ্গল দেখা যায়। এই দ্বীপ গুলিতে বেশি ভাগ যে গাছগুলি দেখা যায় সেগুলি হল- গরান, খলসে, হেঁতাল, বানী, সুন্দরী, গামা প্রভৃতি। এই সমস্ত গাছের জন্যই সুন্দরবন সম্পূর্ণ সবুজে ভরতি। এই গাছ গুলিতে সারা বছরে প্রায় এক বার ফুল ফোটে এবং সেই ফুলের মুধ মৌমাছিরা সংগ্রহ করে।

দেখা যায় হেঁতাল নামক গাছ টিতে ফাল্গুন মাসে ফুল ফোটে আর এর পর থেকেই আস্তে আস্তে আরও গাছ গুলিতে ফুল ফুটতে শুরু করে। ঠিক এই সময় থেকেই মৌমাছিরা জঙ্গলে চাক বানাতে শুরু করে এবং এই ফুলগুলি থেকে Sundarban Honey Collection বা মধু সংগ্রহ করে চাক টি পরিপূর্ণ করে তলে।

সাধারণত ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ এই তিনটি মাসেই মৌলে রা Sundarban Honey Collection বা মধু সংগ্রহ করে থাকে। কারণ বছরের অন্য সময় গুলিতে কোনো গাছে ফুল না থাকার কারণে, মৌমাছিরা তাদের বাসা অথবা চাকে বসে মধু খেতে থাকে । তাই বছরের অন্য সময়ে মৌমাছির মৌচাক থাকলেও তাতে মধুর পরিমাণ থাকেনা বললেই চলে।

Business Loan for Business - ব্যাবসার লোন

তবে পরে ফাল্গুন- চৈত্র মাসের দিকে মৌমাছিরা ফুল গুলি থেকে মধু সংগ্রহ করতে থাকে। আবার এই ফাল্গুন- চৈত্র মাসে ঝর বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে মৌচাকের কোন ক্ষতি হয় না। ও মধু্র পরিমাণ আরও গাঢ় বা পুরু হয়। তাই বছরের মধ্যে এই সময় গুলি মধু সংগ্রহের উপযুক্ত।

এই Sundarban Honey Collection বা মধু সংগ্রহ করার জন্য সরকারি কিছু আইনত সিদ্ধান্ত আছে। সেগুলি হল বন বিভাগের এই মধু সংগ্রহ করার জন্য যারা জঙ্গলে যায় তাদের জন্য একটি বিশেষ পাস বা ছাড় পত্রের ব্যবস্থা আছে। বন দপ্তরের নিয়ম অনুসারে এই পাস বা ছাড় পত্রের দ্বারা স্থানীয় মৌলেদের জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করার জন্য তিন মাসের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে এই মধু তারা নিজেরা বিক্রি করতে পারে না। তাদের ওই মধু বনবিভাগের হাতে তুলে দিতে হয় । বনবিভাগ একটি নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে সংগ্রহ করা মধু মৌলেদের কাছ থেকে কিনে নেয়। যদিও ওই মূল্যের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এর জন্য একটি সুবিধাও তারা পেয়েথাকে।

যদি কোনো মৌলের নিয়ম অনুযায়ী পাস বা ছাড় পত্র থাকে , সে যদি জঙ্গলে গিয়ে বাঘ বা কুমিরের কাছে জীবন হারায় বা আক্রান্ত হয় তাহলে তার পরিবার বনবিভাগের কাছ থেকে প্রায় দেড় থেকে দু লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান পাবে।

Maha Shivaratri 2024 - মহা শিবরাত্রি ২০২৪

মধু সংগ্রহের প্রস্তুতি প্রথমে বন বিভাগের কাছ থেকে পাশ বা ছাড়পত্র নিয়ে জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করতে যেতে হয়। এরা দলে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন থাকে। এই মধু সংগ্রহ করার জন্য তাদের প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন জঙ্গলের মধ্যেই কাটাতে হয়। জঙ্গলে যাওয়ার আগে থেকেই তারা মধু সংগ্রহ ও জঙ্গলে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করে রাখে।

কারণ জঙ্গলের মধ্যে এক ফোঁটা পানিও জল পাওয়া যায় না। তারা দশ থেকে পনেরো দিনের জন্য খাবার বাদেও একটি বড় দা বা হেসো সাথে নিয়ে যায় যা তাদের মধুর চাক কাটতে সাহায্য করে। দলে যে কজন থাকে সবার হাতেই একটি করে ছোট অথবা মাঝারি দা থাকে। তার সাথে আরো দুটি বড় গামলা,একটি বড় নেট জাল, তিন-চারটে হারি, একটি বালতি, খর , মোটা দড়ি, সকলের জন্য একটি করে কদাকার মুখোশ ,প্লাস্টিকের ড্রাম প্রভৃতি।

এই সবগুলো তাদের Sundarban Honey Collection বা মধু সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন হয়। মূলত নদীর জোয়ার এলেই মৌলেরা তাদের মধু সংগ্রহের জন্য যাত্রা শুরু করে। জঙ্গলের সব রাস্তা তাদের পরিচিত। এভাবেই জঙ্গলে বাঘ বা কুমীর থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর মধু সংগ্রহের জন্য সন্দুরবনের গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে তারা।

Leave a comment